করোনার রেশ শেষ না হতেই নতুন আতঙ্ক
এখনও শেষ হয়নি মহামারি করোনাভাইরাসের রেশ। তার মধ্যেই বিশ্বব্যাপী নতুন এক আতঙ্কের নাম হয়ে এসেছে মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স। পাকিস্তানসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ২০২২ সালের পর মাঙ্কিপক্স নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ডব্লিউএইচও এই সতর্কতা জারি করল। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।
জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে ‘মাঙ্কিপক্স’ রোগের সংক্রমণ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইন চালুসহ চিকিৎসকদের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন, জনসচেতনতামূলক পোস্টার-লিফলেট বিলি, প্রতি সপ্তাহে ওয়েবিনারের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নিয়ে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেবিচক, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, এয়ারলাইনস, রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা থার্মাল স্ক্যানার আর্চওয়ে দ্বারা স্ক্রিন করাসহ আগমন স্বাস্থ্য ডেস্কগুলো ডাক্তারের মাধ্যমে পরিচালনার করা হয়েছে। আর প্রয়োজন হলে লক্ষণযুক্ত যাত্রীদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক রোগ হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে পাঠানো ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সে যে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন। সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ বা যৌন মিলনের মাধ্যমে, ব্যবহার করা কাপড়, সুঁই বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণী শিকার করা, কাটা বা রান্না করার সময়, কম তাপমাত্রায় আক্রান্ত প্রাণীর রান্না করা মাংস খেলে এমনকি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে।
মাঙ্কিপক্সে রোগের লক্ষণ: এই রোগের লক্ষণগুলো জীবাণু সংক্রমণের সাধারণত ৩ থেকে ১৭ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে রোগীর দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, গলাব্যথা, কাশি এবং ত্বকে পানিভর্তি ফোসকা। তবে এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গবিহীন থাকতে পারেন। আর আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসকুড়ি হয়, যা হাত, পা, বুক, মুখ, লিঙ্গ, অ-কোষ, ল্যাবিয়া, যৌনি, মলদ্বারসহ যৌনাঙ্গের কাছাকাছি হতে পারে। এ ছাড়াও ফুসকুড়ি প্রাথমিকভাবে পানিভর্তি ফোসকার মতো দেখাতে হয়। ফোসকায় ব্যথা ও চুলকানি হয়।
চিকিৎসা: মাঙ্কিপক্সে রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সাধারণত উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা, পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাবার এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পেলেই রোগী দ্রুত ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর, মাথাব্যথা এবং পেশি ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এ ছাড়া রোগের তীব্রতা বেশি হলে অ্যান্টিভাইরাল (টেকোভিরিম্যাট, সিডোফোবির) ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রেখে ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত চিকিৎসা করা গেলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যাবে। কোনো কোনো দেশে এবং যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে।
শনাক্তকরণ: পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) দ্বারা ভাইরাল ডিএনএ শনাক্তকরণ করে এমপক্সের পরীক্ষা করা সম্ভব। নমুনাগুলো সরাসরি ফুসকুড়ি থেকে নেওয়া হয়- ত্বক, তরল জোরালো সোয়াবিং দ্বারা সংগ্রহ করা হয়। মলদ্বার বা রেক্টাল সোয়াব পরীক্ষা করা যেতে পারে। রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণ পদ্ধতিগুলো কার্যকর নাও হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরে ফোসকা বা ঘা ফাটানো বা চুলকানো যাবে না। এতে রোগ সারতে সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশে ফুসকুড়ি ছড়িয়ে যেতে পারে এবং ঘা সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। তাই ফোসকা নিরাময় না হওয়া বা নিচে নতুন ত্বক না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত অঞ্চলগুলো শেভ করা যাবে না।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ড. বেনজির আহমেদ বলেন, মাঙ্কিপক্সে ঝুঁকিতে বেশি থাকেন শিশু, গর্ভবতী এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা। তবে যে কারও হতে পারে। মাঙ্কিপক্স প্রথম শনাক্ত হয়েছিল আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে। এখন বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় যেমন কোথায় আক্রান্ত হচ্ছে, কোন দেশে বেশি হচ্ছে। সে সব দেশ আমাদের এখানে আসার সম্ভাবনা কতটুকু এবং কতটা ঝুঁকি রয়েছে। আবার কেউ এই রোগের আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে যদিও আসে তা হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোথায় শনাক্ত এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করা হবে এবং কোথায় ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হবে তার জন্য একটি পজিশন পেপার তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে রোগী এলে তখন যেন আমরা বিব্রত না হই। কোথায় রাখব কোথায় চিকিৎসা করাব। এ জন্য গাইডলাইন তৈরি করতে হবে, চিকিৎসক থেকে শুরু ইমিগ্রেশন, বিভিন্ন বন্দরে কর্মকর্তাদের ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে করে রোগীদের চিনতে পারেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে যেসব রেমিট্যান্স যোদ্ধা আসেন তাদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা থাকতে হবে। কারণ ওইসব দেশে আফ্রিকার মানুষ বেশি থাকেন। তাই শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতাসহ সর্বোপরি মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এ জন্য একটি কমিটি করলে ভালো হয়। যারা বিশে^র অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে এবং বাংলাদেশের ঝুঁকি নিরূপণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে কোনোভাবেই এই রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
মাঙ্কিপক্সে সতর্কতার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. শেখ দাউদ আদনান সময়ের আলোকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এই রোগের সংক্রমণ এড়াতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ জন্য ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। আর সংক্রমিত দেশ ভ্রমণের ২১ দিনের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে হটলাইন ১৬২৬৩, ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে এরই মধ্যে ইন্টার হেলথ রেগুলেশন কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসকদের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মকা-সহ পরিস্থিতি পর্যালোচনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আক্রান্ত দেশ থেকে আসা বিমান যাত্রীদের বিশেষ পর্যবেক্ষণ করাসহ সন্দেহজনক রোগীদের আইসোলেশনের ব্যবস্থার জন্য ঢাকার তিনটি হাসপাতালও প্রস্তুত করা হয়েছে।
মোংলা বন্দরে সতর্কতা, মেডিকেল টিম গঠন
মোংলা প্রতিনিধি: ভাইরাসজনিত রোগ মাঙ্কিপক্সের ঝুঁকি এড়াতে মোংলা বন্দরে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যে সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বন্দরের জন্য সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গঠন করা হয়েছে ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন শাহিন রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে এই বন্দরে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। বন্দরে আসা বিদেশি জাহাজের নাবিকদের জাহাজ থেকে নামার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পোর্ট হেলথকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে ‘মাঙ্কিপক্স’ রোগের সংক্রমণ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হটলাইন চালুসহ চিকিৎসকদের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন, জনসচেতনতামূলক পোস্টার-লিফলেট বিলি, প্রতি সপ্তাহে ওয়েবিনারের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নিয়ে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেবিচক, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, এয়ারলাইনস, রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আগত যাত্রীদের তাপমাত্রা থার্মাল স্ক্যানার আর্চওয়ে দ্বারা স্ক্রিন করাসহ আগমন স্বাস্থ্য ডেস্কগুলো ডাক্তারের মাধ্যমে পরিচালনার করা হয়েছে। আর প্রয়োজন হলে লক্ষণযুক্ত যাত্রীদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক রোগ হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে পাঠানো ব্যাপারে সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সে যে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন। সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ বা যৌন মিলনের মাধ্যমে, ব্যবহার করা কাপড়, সুঁই বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণী শিকার করা, কাটা বা রান্না করার সময়, কম তাপমাত্রায় আক্রান্ত প্রাণীর রান্না করা মাংস খেলে এমনকি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে।
মাঙ্কিপক্সে রোগের লক্ষণ: এই রোগের লক্ষণগুলো জীবাণু সংক্রমণের সাধারণত ৩ থেকে ১৭ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে রোগীর দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, গলাব্যথা, কাশি এবং ত্বকে পানিভর্তি ফোসকা। তবে এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গবিহীন থাকতে পারেন। আর আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসকুড়ি হয়, যা হাত, পা, বুক, মুখ, লিঙ্গ, অ-কোষ, ল্যাবিয়া, যৌনি, মলদ্বারসহ যৌনাঙ্গের কাছাকাছি হতে পারে। এ ছাড়াও ফুসকুড়ি প্রাথমিকভাবে পানিভর্তি ফোসকার মতো দেখাতে হয়। ফোসকায় ব্যথা ও চুলকানি হয়।
চিকিৎসা: মাঙ্কিপক্সে রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সাধারণত উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা, পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাবার এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পেলেই রোগী দ্রুত ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর, মাথাব্যথা এবং পেশি ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এ ছাড়া রোগের তীব্রতা বেশি হলে অ্যান্টিভাইরাল (টেকোভিরিম্যাট, সিডোফোবির) ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রেখে ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত চিকিৎসা করা গেলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যাবে। কোনো কোনো দেশে এবং যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে।
শনাক্তকরণ: পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) দ্বারা ভাইরাল ডিএনএ শনাক্তকরণ করে এমপক্সের পরীক্ষা করা সম্ভব। নমুনাগুলো সরাসরি ফুসকুড়ি থেকে নেওয়া হয়- ত্বক, তরল জোরালো সোয়াবিং দ্বারা সংগ্রহ করা হয়। মলদ্বার বা রেক্টাল সোয়াব পরীক্ষা করা যেতে পারে। রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয় না। অ্যান্টিবডি শনাক্তকরণ পদ্ধতিগুলো কার্যকর নাও হতে পারে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরে ফোসকা বা ঘা ফাটানো বা চুলকানো যাবে না। এতে রোগ সারতে সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশে ফুসকুড়ি ছড়িয়ে যেতে পারে এবং ঘা সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। তাই ফোসকা নিরাময় না হওয়া বা নিচে নতুন ত্বক না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত অঞ্চলগুলো শেভ করা যাবে না।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ড. বেনজির আহমেদ বলেন, মাঙ্কিপক্সে ঝুঁকিতে বেশি থাকেন শিশু, গর্ভবতী এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা। তবে যে কারও হতে পারে। মাঙ্কিপক্স প্রথম শনাক্ত হয়েছিল আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে। এখন বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় যেমন কোথায় আক্রান্ত হচ্ছে, কোন দেশে বেশি হচ্ছে। সে সব দেশ আমাদের এখানে আসার সম্ভাবনা কতটুকু এবং কতটা ঝুঁকি রয়েছে। আবার কেউ এই রোগের আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে যদিও আসে তা হলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোথায় শনাক্ত এবং ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করা হবে এবং কোথায় ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হবে তার জন্য একটি পজিশন পেপার তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে রোগী এলে তখন যেন আমরা বিব্রত না হই। কোথায় রাখব কোথায় চিকিৎসা করাব। এ জন্য গাইডলাইন তৈরি করতে হবে, চিকিৎসক থেকে শুরু ইমিগ্রেশন, বিভিন্ন বন্দরে কর্মকর্তাদের ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে করে রোগীদের চিনতে পারেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে যেসব রেমিট্যান্স যোদ্ধা আসেন তাদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা থাকতে হবে। কারণ ওইসব দেশে আফ্রিকার মানুষ বেশি থাকেন। তাই শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতাসহ সর্বোপরি মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এ জন্য একটি কমিটি করলে ভালো হয়। যারা বিশে^র অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে এবং বাংলাদেশের ঝুঁকি নিরূপণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে কোনোভাবেই এই রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
মাঙ্কিপক্সে সতর্কতার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. শেখ দাউদ আদনান সময়ের আলোকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এই রোগের সংক্রমণ এড়াতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এ জন্য ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে। আর সংক্রমিত দেশ ভ্রমণের ২১ দিনের মধ্যে এই লক্ষণ দেখা দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে হটলাইন ১৬২৬৩, ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে এরই মধ্যে ইন্টার হেলথ রেগুলেশন কমিটির সভা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসকদের জন্য গাইডলাইন প্রণয়ন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মকা-সহ পরিস্থিতি পর্যালোচনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আক্রান্ত দেশ থেকে আসা বিমান যাত্রীদের বিশেষ পর্যবেক্ষণ করাসহ সন্দেহজনক রোগীদের আইসোলেশনের ব্যবস্থার জন্য ঢাকার তিনটি হাসপাতালও প্রস্তুত করা হয়েছে।
মোংলা বন্দরে সতর্কতা, মেডিকেল টিম গঠন
মোংলা প্রতিনিধি: ভাইরাসজনিত রোগ মাঙ্কিপক্সের ঝুঁকি এড়াতে মোংলা বন্দরে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যে সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বন্দরের জন্য সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গঠন করা হয়েছে ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন শাহিন রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে এই বন্দরে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। বন্দরে আসা বিদেশি জাহাজের নাবিকদের জাহাজ থেকে নামার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পোর্ট হেলথকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।