Space for ads

নিজেই রোগাক্রান্ত তাড়াইল স্বাস্থ্যকেন্দ্র

 প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১১ অপরাহ্ন   |   ডায়গনস্টিক সেন্টার

নিজেই রোগাক্রান্ত তাড়াইল স্বাস্থ্যকেন্দ্র
Space for ads

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ময়লার স্তূপ। নোংরা ও অপরিষ্কার টয়লেটে যেতে হয় নাক চেপে। হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে যেতে হয় আশপাশে থাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অথবা স্থানীয় কারো বাসায়। শুধু তাই নয়, জরুরি বিভাগের দৃশ্য আরো ভয়াবহ।

রোগী যে বেডে শুয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন ঠিক সেখানেই ফেলে হচ্ছে রক্তাক্ত গজ, কাপড়, তুলাসহ নোংরা উচ্ছিষ্ট। রোগীর ড্রেসিংয়ের ব্যান্ডেজ ও অন্যান্য ব্যবহৃত বর্জ্য দিয়ে ভরে গেছে ওয়ার্ডের চারপাশ। যেন নিজেই রোগাক্রান্ত কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নোংরা ও অপরিষ্কার টয়লেটে যেতে হয় নাক চেপে। হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে যেতে হয় আশপাশে থাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে অথবা নিকটস্থ আত্মীয় স্বজনদের বাসায়। ফলে এই হাসপাতালে ভর্তিরত রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

রোগীরা জানান, নর্দমা ও উচ্ছিষ্টের গন্ধে আমরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। এখানে তীব্র দুর্গন্ধের কারণে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন ভয়ানক নোংরা পরিবেশ এর আগে আর দেখিনি। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এই হাসপাতালে থাকা সম্ভব নয়। সেখানে একজন রোগী কিভাবে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হবে?

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন কেন্দুয়া উপজেলার চর বৈরাগী গ্রামের রশিদা বেগম। এবং মোজাফফরপুর গ্রামের নাসিমা বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার ২ বছরের শিশু বাচ্চা উসামাকে ভর্তি করেছেন ৩-৪ দিন হলো। তাদের সঙ্গে থাকা তাদের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল ভয়ানক নোংরা ও বিষাক্ত আবর্জনাযুক্ত ড্রেনের দুর্গন্ধের কারণে আমরা কোনো কিছুই মুখে দিতে পারছি না। বাড়ি থেকে কেউ আসলে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। এখানে আসার পর থেকে রোগীর সঙ্গে আমরা নিজেরাও কয়েকবার বমি করেছি।

উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের বোরগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে মানছুরা বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন চারদিন ধরে। মাকে কলা দিয়ে ভাত খাওয়ানোর অবিরাম চেষ্টা করছেন তার মেয়ে নাসিমা। কিন্তু বৃদ্ধা কিছুতেই খাবেন না।

এ সময় নাসিমা বেগম বলেন, তাড়াইল হাসপাতালে এসেছি মায়ের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু দুর্গন্ধের কারণে বারবার বমি করছে মা। নোংরা পরিবেশের কারণে ভালো হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দুদিন থেকে আমি নিজেও কিছু মুখে দিতে পারছি না।

জরুরি বিভাগের দৃশ্য আরো ভয়াবহ। কিছু বহিরাগত ও আউটসোর্সিং এ ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ওয়ার্ডবয়দের বিভিন্ন ধরনের ড্রেসিং, সেলাই, হাত-পা ভেঙে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা দিতে দেখা গেল। রোগী যে বেডে শুয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন ঠিক সেখানেই ফেলে হচ্ছে রক্তাক্ত গজ, কাপড়, তুলাসহ নোংরা উচ্ছিষ্ট। রোগীর ড্রেসিংয়ের ব্যান্ডেজ ও অন্যান্য ব্যবহৃত বর্জ্য দিয়ে ভরে গেছে ওয়ার্ডের চারপাশ। তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমন বেহালদশায় রোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাড়াইল উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ছাড়াও পাশের উপজেলা ইটনা, করিমগঞ্জ, নেত্রকোণার কেন্দুয়া, মদন ও ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মানুষেরা চিকিৎসা নিতে আসেন তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরিবেশ সংরক্ষণ ১৯৯৭ এর বিধিমালা অনুযায়ী হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ সব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মেডিকেল বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের বিধান রয়েছে। কিন্তু তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে মেডিকেল বর্জ্য প্রক্রিয়া, পরিশোধন ও ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর ও যুগোপযোগী কোনো ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়নি। হাসপাতালেই যেন ময়লা আবর্জনার পাহাড়। ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোগীরা।

তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. মোহাম্মদ আলমাছ হোসেন বলেন, ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান করা হবে।

BBS cable ad