Space for ads

অবৈধ ক্লিনিকের ছড়াছড়ি, চালানো হচ্ছে না অভিযান

 প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন   |   ডায়গনস্টিক সেন্টার

অবৈধ ক্লিনিকের ছড়াছড়ি, চালানো হচ্ছে না অভিযান
Space for ads

বৈধ কিংবা অবৈধ ময়মনসিংহ নগরীর সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবে ব্যবসা এখন জমজমাট। কারণ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে ইচ্ছেমতো দালাল নিয়োগ দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনা হচ্ছে।

এছাড়া অনেক সময় সরকারি হাসপাতালে প্রবেশের আগেই দালালদের খপ্পরে পড়ে যান রোগীরা। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে মালিকপক্ষ দোষ তাদের কাঁধে নিতে চান না। তবে কখনো কখনো জানাজানি হওয়ার আগেই মৃত্যু হওয়া রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মিটমাট করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া।

কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আজিজুল হক।

তিনি বলেন, নিয়ম না মেনে ব্যাঙের ছাতার মতো নগরীর চরপাড়া, নয়াপাড়া, কপি ক্ষেত, মাসকান্দা, ব্রাহ্মপল্লী, বাঘমারা, কৃষ্টপুর, পাটগুদাম এলাকাসহ রামকৃষ্ণমিশন রোড, সাহেবআলী রোড, চামড়াগুদাম কালিবাড়ি রোডসহ বিভিন্ন অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজি ল্যাব। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া দালালরা মমেক হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে আনেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে হাতিয়ে নেন টাকা। মানহীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাঝেমধ্যে ভুল রিপোর্ট আসে। অপচিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

আব্দুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে অনুমোদন নেওয়া বেশিররভাগ প্রতিষ্ঠানই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। আর অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। এগুলোতে রোগী পা বাড়ালেই পকেট ফাঁকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। প্রকাশ্যে অবৈধ প্রতিষ্ঠান চললেও নিয়মিত অভিযান চালানো হয় না। এতে অনেক রোগী অবৈধ প্রতিষ্ঠানকে বৈধ মনে করেই চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী একটি ১০ শয্যার ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক তিনজন ডিউটি চিকিৎসক ও ছয়জন ডিপ্লোমা নার্স থাকার কথা থাকলেও অনুমোদন পাওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই এই সংখ্যার চিকিৎসক ও নার্স থাকেন না। অনেকে ক্লিনিকের লাইসেন্স নিয়ে এর সঙ্গে চালাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নিয়ে এর সঙ্গে ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে।

হাসপাতাল পরিচালনার অনুমোদন নিয়ে এর সঙ্গে ল্যাব খুলে বসেছে। আবার কোনোটি শুধু লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে প্রতিষ্ঠানের সামনে বড় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে লিখে রাখছে আবেদিত এবং স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

এছাড়া আবাসিক ভবনে চলছে অনেক প্রতিষ্ঠান। নেই বর্জ্য শোধনাগার। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক দেখানো হয় কেবল খাতায়, আয়াদের নার্সের পোশাক পরিয়ে রোগীদের সাথে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করা হচ্ছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী দেখছেন সরকারি চিকিৎসকরা।

মমেক হাসপাতালটিতে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগী থাকে। অনেক রোগী দ্রুত সেবা পেতে চান। এই সুযোগ কাজে লাগায় বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের দালালরা। তাদের খপ্পরে পড়ে রোগী যান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এছাড়া বর্তমানে মমেক হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের প্রায় সব ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও কমিশনভোগী চিকিৎসকরা বাড়তি আয়ের জন্য অনেক রোগীদের স্লিপে ল্যাবের নাম লিখে বাইরে পাঠাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন হাসপাতালের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে, অন্যদিকে রোগীদেরও বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক আবার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবের সাথে সরাসরি জড়িত। এসব চিকিৎসকের অধিকাংশই একাধিক গাড়ি-বাড়ির মালিক। প্রায় ছয় মাস যাবত অভিযান চালানো হচ্ছে না।

স্থানীয় স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, শহরে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ল্যাব রয়েছে প্রায় ২০০টি। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ। জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১ হাজার ২টি। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, এটি শুধু তার পরিসংখ্যান।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমিন কালাম বলেন, মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালিয়েই ক্ষান্ত কর্তৃপক্ষ। ফলে অবৈধ প্রতিষ্ঠান চলছে বীরদর্পে। চিকিৎসা সেবার নামে রমরমা ব্যবসা চলছে।

ময়মনসিংহ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ জালাল হৃদয় বলেন, শুধু ময়মনসিংহে নয় সারাদেশেই এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই চলছে। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি ও ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য বিভাগের।

পরিবেশ অধিদফতর ময়মনসিংহের বিভাগীয় পরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, অনেক আবাসিক ভবনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোতে আলাদাভাবে সিঁড়িও ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু এটি গোপন রেখে পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়। এক্ষেত্রে আমরা খোঁজখবর নিয়ে ছাড়পত্র দিচ্ছি না। এ ছাড়া বর্জ্য শোধনাগার থাকাসহ বিভিন্ন নিয়ম মানতে হবে। যারা আবেদন করে, তারা এসব কিছুই মানে না। ফলে পরিবেশের ছাড়পত্র অনেকেই পায় না।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স না থাকাসহ স্বাস্থ্য খাতের বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নানা সমস্যায় জর্জরিত। এগুলোতে চিকিৎসার নামে শুধু চলে বাণিজ্য। মাঝেমধ্যে বৈধ ও অবৈধ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে নানা অব্যবস্থাপনা পাওয়া যায়। তখন কোনটিকে করা হয় সীলগালা, আবার কোনোটিকে সতর্ক করা হয়। তালা ঝুলিয়ে ওটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দ্রুত সময়ে মধ্যে আবারো অভিযান চালানো হবে।

স্বাস্থ্য বিভাগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বলেন, আইন অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। নিবন্ধন ছাড়া প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের অন্যায় করার সুয়োগ থাকে। এর সঙ্গে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সব অবৈধ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করাসহ বৈধ প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসেবার মান ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, এক হাজার শয্যার বিপরীতে গড়ে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের প্রায় সব ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো চিকিৎসক বাড়তি আয়ের জন্য কোনো রোগীর স্লিপে ল্যাবের নাম লিখে বাইরে পাঠানোর প্রমাণ মিললে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া হাসপাতালের ভেতরে আসা দালালদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

BBS cable ad