ময়মনসিংহ মেডিক্যালে গাদাগাদি আর গরমে রোগীদের কষ্ট বেশি

‘ভাই গরমে খুব কষ্ট। মানুষে গিজগিজ করছে। ফ্যানের বাতাসও গরম। শান্তিতে একটু শ্বাসও ফেলানো যায় না।
রোগীরও কষ্ট, আমরা যারা রোগীর সঙ্গে আছি আমরারও কষ্ট’। জরুরি বিভাগের দু’তলায় বারান্দায় থাকা আব্দুল কাদির (৪০) এক রোগীর স্বজন এভাবেই তার কষ্টের কথা জানালেন। ছোট ভাইকে নিয়ে এখানে আছেন ২ দিন ধরে।
চিকিৎসা কেমন পাচ্ছেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা আছে কম বেশি।
কিন্তু গরম আর গাদাগাদির কারণে রোগীর ঘুম নাই। আরাম নাই। এইখানের বাতাসটাও ভারী।’
ময়মনসিংহ মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালের একাধিক রোগীর সঙ্গে আলাপে জানা যায়, চিকিৎসা নিয়ে তাদের কম বেশি অভিযোগ সব সময়েই ছিল।
তবে এরপরও প্রতিদিন বিপুল সংখ্যাক রোগী এ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। তবে অধিকাংশ রোগীরই কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাড়ি যেতে হয়। এর মাঝে আছে, টয়লেটের সমস্যা, চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের কারো কারো কঠোর ব্যবহার, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা, প্রয়োজন মতো ওষুধপত্র না পাওয়া, আউটডোরে সিরিয়াল পেতে ভোগান্তি ইত্যাদি। তবে প্রায় সব রোগীরই কমন একটা অভিযোগ থাকে তাহলো, হাসপাতালের পরিবেশটা গাদাগাদি, নোংরা, উৎকট গন্ধের। উপচে পড়া রোগীর কারণে ওয়ার্ডে, ওয়ার্ডের মেঝেতে, বারান্দায়, আউটডোরে রোগীর ঠাসাঠাসি অবস্থা।
সর্বক্ষণ ফ্যান চললেও ফ্যানের বাতাসও ভারী। অনেক ওয়ার্ডে ও বারান্দায় বাতাসেরও আনাগোনা কম।
এদিকে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ জানান, প্রতিদিন এখানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ময়মনসিংহ ছাড়াও রোগী আসছে বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে। রোগী আসছে কুড়িগ্রামের রৌমারী, সুনামগঞ্জ ও গাজীপুরে জেলারও একাংশ থেকে। ১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালটি এখন আর রোগী ধারণ করতে পারছে না। তাই চিকিৎসার পরিবেশ অনেকটাই নেই। ১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালে গড়ে রোগী ভর্তি থাকে পৌনে ৪ হাজার। আর আউটডোরে রোগী আসে ৪ থেকে ৫ হাজার। তাদের সঙ্গে থাকে গড়ে কমপক্ষে ২ জন করে স্বজন। সব মিলিয়ে পরিবেশ খুবই জটিল।
সরজমিনে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগ, সার্জারি, শিশু, হৃদরোগ, মেডিসিনসহ প্রায় সব বিভাগের ওয়ার্ডগুলোতেই রোগীর ঠাসাঠাসি অবস্থা। এক বিছানার সঙ্গে আরেক বিছানা লেগে আছে। অনেক রোগীর স্বজন, রোগীকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। শিশু ওয়ার্ডে কথা হয় আমেনা বেগমের সঙ্গে। তার শিশু এখানে ভর্তি। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা আন্তরিক। এ নিয়ে তার কোনো অভিযোগ নাই। কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্ট গরমে। মাঝে মাঝে মনে হয়, বাচ্চা টাকে নিয়ে বাইরে একটু খোলা বাতাসে যাই।’
সার্জারি ওয়ার্ডের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা শিবু (৪৫) নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘ভেতরে তার ছোট ভাই। এত গরম যে তিনি কিছুক্ষণ পরপর বাইরে বারান্দায় এসে একটু বাতাস টানেন।’
নতুন ভবনের নীচতলাতে আউটডোরের টিকিট কাউন্টারে কথা হয় দিলীপ সাহা নামে এক রোগির সাথে। তিনি বলেন, ‘ভিড় আর গরমেই তিনি কাহিল। তাড়াতাড়ির ডাক্তার দেখিয়ে বাইরে যেতে পারলেই তিনি বাঁচেন। শুধু রোগীরা নয়, চিকিৎসক, নার্সরাও রোগীদের ভিড়, গাদাগাদি পরিবেশ আর গরমে অতিষ্ঠ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক ও নার্স বলেন, প্রতিদিন গড়ে আউটডোরে ৪ হাজারের মতো রোগী আসে। ইনডোরে থাকে গড়ে পৌনে ৪ হাজার। তাদের সঙ্গে কমপক্ষে ২ জন করে স্বজন থাকলেও পুরো হাসপাতালে লোকে লোকারণ্য পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এত মানুষের অবস্থান, চলাফেরায় চিকিৎসার স্বাভাবিক আর স্বস্তির পরিবেশ থাকে না। সেই কষ্ট সবাইকেই স্পর্শ করে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার ১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালের ইনডোরে রোগী ভর্তি ছিল ৩৭০০ এর মতো। আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে আরো ৪/৫ হাজার। রোগীর ভিড়ই বড় সমস্যা। নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিছুটা সমস্যা কমবে। তবে এখন দরকার নতুন স্থানে, নতুন হাসপাতাল নির্মাণ।’