ডেঙ্গু জ্বরের আগে ও পরের সতর্কতা
গেল সেপ্টেম্বর থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দেশজুড়ে। কারণ এই সময় প্রচুর বৃষ্টি হয়, বৃষ্টির পানি নেমে গেলে ডেঙ্গু ভাইরাসের উৎপাত শুরু হয়। ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাল সংক্রমণ, যা সংক্রমিত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে।
ডেঙ্গুর সাধারণ কিছু উপসর্গ ছাড়াও, শরীর থেকে রক্তক্ষরণ, পানিশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি চোখেও সংক্রমণ দেখা দেয়। কমতে থাকে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যা। ডেঙ্গু নিয়ে সাবধান হওয়ার দরকার আছে অবশ্যই, তবে সচেতনতাও জরুরি।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, লক্ষণ দেখেই একগাদা ওষুধ খেয়ে নেয়া বা নানা রকম টোটকা ব্যবহার করতে শুরু করে দেওয়া ঠিক নয়। রোগের সঠিক চিহ্নিতকরণ আগে দরকার।
ডেঙ্গুর জ্বর থাকে ৩-৭ দিন। ঐ সময়ে প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা থাকে, গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা হয়, তীব্র মাথা যন্ত্রণা এবং হালকা শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, রোগের বেশি বেড়ে গেলে তখন শরীরে পানির ঘাটতি হতে থাকে, রক্তচাপ আচমকা কমে যায়, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যেতে পারে। এই সব লক্ষণ দেখেই ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলা বা অনলাইন ঘেঁটে বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করতে শুরু করলেই মুশকিল। আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে ডেঙ্গু ধরা পড়লে তবে চিকিৎসা শুরু হবে। একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন রোগীকে ঘরে রেখে চিকিৎসা করা যাবে না কি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
চিকিৎসকরা আরো বলেন, এনএস১ অ্যান্টিজেন’ টেস্ট আগে করা জরুরি। এই টেস্টের রিপোর্ট দেখে বোঝা যাবে শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কি না। অনেকেই এনএস১ টেস্ট করে ভাবেন ডেঙ্গু হয়েছে। সেখানেও ভুল হয়। ঐ পরীক্ষায় কেবল ভাইরাসের উপস্থিতি অনুমান করা হয়। সেই ভাইরাস ডেঙ্গু কি না, তা ধরতে রক্তের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে হয়। তার জন্য ‘আইজিএম’ ও ‘আইজিজি’ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা জরুরি, যা নিশ্চিত ভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ চিহ্নিত করতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর ৩ থেকে ৭ দিন থাকে, এরপর জ্বর কমতে থাকে। জ্বর কমতে শুরু করার পর পরই আসল বিপদটা শুরু হয়, ডেঙ্গির চরিত্র অনেক বদলেছে। জ্বর যে দিন থেকে কমতে থাকে, ডেঙ্গির খারাপ সময়টা সে দিন থেকেই শুরু হয়। এরপর থেকেই রোগীর শরীরে সাইটোকাইন স্টর্ম বা হাইপার ইমিউন রিঅ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ হচ্ছে যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোই শরীরের শত্রু হয়ে ওঠে। অতি সক্রিয় হয়ে অন্যান্য সুস্থ কোষগুলোকে নষ্ট করতে থাকে। তখন মারাত্মক প্রদাহ হয়। প্লেটলেটের সংখ্যা কমতে থাকে। বিভিন্ন রক্তবাহী জালিকাগুলো ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একে বলে ডেঙ্গু হেমারেজিক জ্বর। শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি হলো ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ, যা এখন অনেকেরই হচ্ছে। কেবল জ্বর, মাথাব্যথা বা গায়ে র্যাশ বেরোলেই যে ডেঙ্গু হবে, তা নয়। যদি শরীরের বিভিন্ন ধমনী ও শিরা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে, নাক-মুখ, দাঁত, মাড়ি, মলদ্বার, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে, তখন সাবধান হতে হবে।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে যা করবেন
১. ডেঙ্গুর এডিস মশা ভোরে ও সন্ধ্যায় বেশি কামড়ায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা, ভোর ৪টা থেকে সকাল ৬টা ডেঙ্গুর মশা বেশি সক্রিয় থাকে। এলাকায় যদি মশার উৎপাত বেশি থাকে, তাহলে ঐ সময়ে প্রয়োজনে ঘরের জানালা বন্ধ রাখুন। মশারি ব্যবহার করতে হবে অবশ্যই।
২. বাড়ির কোথাও পানি যেন না জমে থাকে, খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির ছাদে, টবের মধ্যে, রান্নাঘরে কোথাও পানি জমতে দেবেন না। খোলা পাত্রে পানি রেখে দেবেন না।
৩. বাড়ির আশেপাশে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। নোংরা বা আবর্জনা যেন না জমে থাকে। যদি নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়, তাহলে স্থানীয় পৌরসভায় যোগাযোগ করুন।
৪. ঘরের জানলা, ভেন্টিলেটর অথবা বাড়ির যেসব অংশ দিয়ে মশা ঢোকার আশঙ্কা প্রবল, সেই জায়গাগুলোতে জাল ব্যবহার করতে পারেন।
৫. ব্লিচিং পাউডার জীবাণুনাশক হলেও ডেঙ্গুর লার্ভা মারতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি-লার্ভাল স্প্রে’ ব্যবহার করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ার পরে সতর্কতা
১. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ঠিকমতো ডোজে দিলে জ্বর কমে। আর কোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।
২. লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে থাকে।
৩. রোগীকে ব্যথা কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন বা ঐ জাতীয় ওষুধ দেওয়া চলবে না।
৪. ডেঙ্গু হলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়, তাই যথেষ্ট পরিমাণ পানি, শরবত, ডাবের পানি, অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে।
৫. রোগী খেতে না পারলে স্যালাইন দিতে হবে। প্যাকেটজাত ফলের রস বা হেল্থ ড্রিঙ্ক খাওয়াতে গেলে হিতে বিপরীত হবে।
৬. যদি রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, পালস রেট বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে, তাহলে দেরি না করে হাসপাতাল বা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।
ডেঙ্গুর সাধারণ কিছু উপসর্গ ছাড়াও, শরীর থেকে রক্তক্ষরণ, পানিশূন্যতা, শ্বাসকষ্ট, এমনকি চোখেও সংক্রমণ দেখা দেয়। কমতে থাকে প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার সংখ্যা। ডেঙ্গু নিয়ে সাবধান হওয়ার দরকার আছে অবশ্যই, তবে সচেতনতাও জরুরি।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, লক্ষণ দেখেই একগাদা ওষুধ খেয়ে নেয়া বা নানা রকম টোটকা ব্যবহার করতে শুরু করে দেওয়া ঠিক নয়। রোগের সঠিক চিহ্নিতকরণ আগে দরকার।
ডেঙ্গুর জ্বর থাকে ৩-৭ দিন। ঐ সময়ে প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা থাকে, গায়ে হাত-পায়ে ব্যথা হয়, তীব্র মাথা যন্ত্রণা এবং হালকা শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, রোগের বেশি বেড়ে গেলে তখন শরীরে পানির ঘাটতি হতে থাকে, রক্তচাপ আচমকা কমে যায়, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যেতে পারে। এই সব লক্ষণ দেখেই ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলা বা অনলাইন ঘেঁটে বিভিন্ন ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করতে শুরু করলেই মুশকিল। আগে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। তাতে ডেঙ্গু ধরা পড়লে তবে চিকিৎসা শুরু হবে। একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন রোগীকে ঘরে রেখে চিকিৎসা করা যাবে না কি হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
চিকিৎসকরা আরো বলেন, এনএস১ অ্যান্টিজেন’ টেস্ট আগে করা জরুরি। এই টেস্টের রিপোর্ট দেখে বোঝা যাবে শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে কি না। অনেকেই এনএস১ টেস্ট করে ভাবেন ডেঙ্গু হয়েছে। সেখানেও ভুল হয়। ঐ পরীক্ষায় কেবল ভাইরাসের উপস্থিতি অনুমান করা হয়। সেই ভাইরাস ডেঙ্গু কি না, তা ধরতে রক্তের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে হয়। তার জন্য ‘আইজিএম’ ও ‘আইজিজি’ অ্যান্টিবডি টেস্ট করা জরুরি, যা নিশ্চিত ভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ চিহ্নিত করতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর ৩ থেকে ৭ দিন থাকে, এরপর জ্বর কমতে থাকে। জ্বর কমতে শুরু করার পর পরই আসল বিপদটা শুরু হয়, ডেঙ্গির চরিত্র অনেক বদলেছে। জ্বর যে দিন থেকে কমতে থাকে, ডেঙ্গির খারাপ সময়টা সে দিন থেকেই শুরু হয়। এরপর থেকেই রোগীর শরীরে সাইটোকাইন স্টর্ম বা হাইপার ইমিউন রিঅ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ হচ্ছে যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলোই শরীরের শত্রু হয়ে ওঠে। অতি সক্রিয় হয়ে অন্যান্য সুস্থ কোষগুলোকে নষ্ট করতে থাকে। তখন মারাত্মক প্রদাহ হয়। প্লেটলেটের সংখ্যা কমতে থাকে। বিভিন্ন রক্তবাহী জালিকাগুলো ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একে বলে ডেঙ্গু হেমারেজিক জ্বর। শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এটি হলো ডেঙ্গুর ভয়াবহ রূপ, যা এখন অনেকেরই হচ্ছে। কেবল জ্বর, মাথাব্যথা বা গায়ে র্যাশ বেরোলেই যে ডেঙ্গু হবে, তা নয়। যদি শরীরের বিভিন্ন ধমনী ও শিরা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে, নাক-মুখ, দাঁত, মাড়ি, মলদ্বার, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে আসে, তখন সাবধান হতে হবে।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে যা করবেন
১. ডেঙ্গুর এডিস মশা ভোরে ও সন্ধ্যায় বেশি কামড়ায়। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা, ভোর ৪টা থেকে সকাল ৬টা ডেঙ্গুর মশা বেশি সক্রিয় থাকে। এলাকায় যদি মশার উৎপাত বেশি থাকে, তাহলে ঐ সময়ে প্রয়োজনে ঘরের জানালা বন্ধ রাখুন। মশারি ব্যবহার করতে হবে অবশ্যই।
২. বাড়ির কোথাও পানি যেন না জমে থাকে, খেয়াল রাখতে হবে। বাড়ির ছাদে, টবের মধ্যে, রান্নাঘরে কোথাও পানি জমতে দেবেন না। খোলা পাত্রে পানি রেখে দেবেন না।
৩. বাড়ির আশেপাশে পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। নোংরা বা আবর্জনা যেন না জমে থাকে। যদি নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়, তাহলে স্থানীয় পৌরসভায় যোগাযোগ করুন।
৪. ঘরের জানলা, ভেন্টিলেটর অথবা বাড়ির যেসব অংশ দিয়ে মশা ঢোকার আশঙ্কা প্রবল, সেই জায়গাগুলোতে জাল ব্যবহার করতে পারেন।
৫. ব্লিচিং পাউডার জীবাণুনাশক হলেও ডেঙ্গুর লার্ভা মারতে পারে না। সে ক্ষেত্রে ‘অ্যান্টি-লার্ভাল স্প্রে’ ব্যবহার করতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ার পরে সতর্কতা
১. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ঠিকমতো ডোজে দিলে জ্বর কমে। আর কোনো ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।
২. লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নীচে থাকে।
৩. রোগীকে ব্যথা কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন বা ঐ জাতীয় ওষুধ দেওয়া চলবে না।
৪. ডেঙ্গু হলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়, তাই যথেষ্ট পরিমাণ পানি, শরবত, ডাবের পানি, অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে।
৫. রোগী খেতে না পারলে স্যালাইন দিতে হবে। প্যাকেটজাত ফলের রস বা হেল্থ ড্রিঙ্ক খাওয়াতে গেলে হিতে বিপরীত হবে।
৬. যদি রোগীর রক্তচাপ কমে যায়, পালস রেট বেড়ে যায়, প্রস্রাব কমে যায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে, তাহলে দেরি না করে হাসপাতাল বা নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।