ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ও প্রতারণার অভিযোগে সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার
ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় প্রসূতিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার হয়েছেন। মাহবুবা রহমান আঁখি নামে ওই প্রসূতির স্বামীর করা মামলায় ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার দুজন চিকিৎসককে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করা হয়েছে। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম ঢাকা টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি পারভেজ বলেন, গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণা করে মাহবুবা রহমান আঁখি নামে ওই প্রসূতিকে হাসপাতালে ভর্তির কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া এরপর নবজাতকের মৃত্যু ও প্রসূতি মা মুমুর্ষূ হওয়ার পেছনে তাদের অবহেলা রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন। তারা এই স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় আদালতে দেওয়ার কথা জানালে আদালতে রিমান্ড না চেয়ে জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করা হয়।
এর আগে গত বুধবার রাতে নবজাতকের ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হয়েছে বলে অভিযোগ এনে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন মারা যাওয়া নবজাতকের বাবা ইয়াকুব আলী সুমন। মামলায় গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসকসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
ইয়াকুব আলীর অভিযোগ, সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় তার স্ত্রী প্রসূতি মাহবুবা রহমান আঁখি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছেন। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছেন তাদের নবজাতক সন্তানও।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাস ধরে সেন্ট্রাল হসপিটালের গাইনি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন মাহবুবা রহমান আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে তার সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।
প্রসব ব্যথা ওঠায় গত ৯ জুন রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় মাহবুবা রহমান আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।’
গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ধানমন্ডি থানার ওসি বলেন, ডা. সংযুক্তা হাসপাতালে আছেন বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রসূতিকে প্রতারণার মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি করার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তার চিকিৎসকরা।
ওসি পারভেজ বলেন, তদন্ত করে দেখা গেছে, সংযুক্তা দেশের বাইরে আছেন। সে কারণে তাকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়নি। তবে তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে পরবর্তীতে মামলায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ইয়াকুব আলী বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেক-আপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন।