শিরোনাম

Space for ads

ক্যান্সারের রোগী বৃদ্ধিতে শীর্ষে বাংলাদেশ, চিকিৎসা সুবিধায় সর্বনিম্নে

 প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪২ অপরাহ্ন   |   চিকিৎসা

ক্যান্সারের রোগী বৃদ্ধিতে শীর্ষে বাংলাদেশ, চিকিৎসা সুবিধায় সর্বনিম্নে
Space for ads

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এখন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে বাংলাদেশে। যদিও এ বিপুলসংখ্যক আক্রান্তের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারছে না দেশের চিকিৎসা খাত। ফলে এ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় বিদেশনির্ভরতা বাড়ছে।

বৈশ্বিক ক্যান্সার গবেষণা জার্নাল ল্যানসেট অনকোলজির ডিসেম্বর সংস্করণে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে তা ২১ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। আর এখন পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা কম-বেশি ১০ লাখের কাছাকাছি। ২০৪০ সালের মধ্যে তা ১৪ লাখে উন্নীত হবে। সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশের চেয়ে এখানে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

দেশে বিপুলসংখ্যক ক্যান্সার রোগীর জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অনকোলজিস্ট ক্লাবের আয়োজনে গতকাল অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠক চলাকালে তুলে ধরা এক উপস্থাপনায় উঠে আসে রোগীর অনুপাতে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেডিওথেরাপি সুবিধা বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম। দেশের প্রায় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ ক্যান্সার রোগী রেডিওথেরাপি সুবিধা নিতে পারছেন। যেখানে প্রতিবেশী ভারতে এ হার ৪২ শতাংশ। শ্রীলংকায় এ হার ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তান ও নেপালে এ হার যথাক্রমে ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ ও ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

‘সার্কভুক্ত দেশগুলোয় ক্যান্সার চিকিৎসার বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল ইনসেপ্টা। মিডিয়া পার্টনার ছিল বণিক বার্তা ও চ্যানেল আই।

বৈঠকে বক্তারা তুলে ধরেন, দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা সুবিধা অপর্যাপ্ত। আর এর এক-তৃতীয়াংশই ঢাকায় কেন্দ্রীভূত। উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে উঠে আসে, বাংলাদেশে রেডিওথেরাপিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি আছে মোট ২৪টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে। এর ১৫টি সরকারি ও নয়টি বেসরকারি। এছাড়া আরো আটটি চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে রেডিওথেরাপি সুবিধা আনার কাজ চলমান রয়েছে।

এ সময় খাত বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যে উঠে আসে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। তবে সে তুলনায় বাড়ছে না চিকিৎসাসেবা ও সুবিধা। আবার অন্যান্য দেশের তুলনায় খরচও বেশি। এ কারণে ক্যান্সার আক্রান্তদের একটি বড় অংশ দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। হাসপাতালগুলোয় দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত জনবল না থাকাটাও একটি সমস্যা।

বাংলাদেশে রেডিয়েশন অনকোলজিস্টের সংখ্যা ২৫০। মেডিকেল অনকোলজিস্ট আছেন ২২ জন। পেডিয়াট্রিক অনকোলজিস্ট আছেন ৪৭ জন। আর মেডিকেল ফিজিসিস্ট আছেন ৭০ জন। রেডিয়েশন থেরাপি টেকনোলজিস্টের সংখ্যা ১১৫।

ল্যানসেট অনকোলজির ডিসেম্বর সংস্করণে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহারও বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে এ মারণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ডা. সাইফুল হক এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন।

গতকালের গোলটেবিল বৈঠকে অনকোলজি ক্লাবের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. এএমএম শরিফুল আলম বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ক্যান্সার চিকিৎসার চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম অপ্রতুল। আমাদের দেশের ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য দরকার ১৮০-২০০টি লিনিয়ার এক্সেলেটর মেশিন। সে তুলনায় আছে মোটে ১৮-২০টি। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিনিয়ার এক্সেলেটর মেশিন আছে শুধু জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে। তবে বর্তমানে সেখানকার একটি মেশিনও চালু নেই। আর আমাদের দেশে নামমাত্র মলিকুলার স্টাডির জন্য গবেষণাগার রয়েছে মোট একটি-দুটি। ফলে এ পরীক্ষার জন্য রোগীদের দেহ থেকে সংগৃহীত সেল ভারতে পাঠাতে হয়।’

অনকোলজি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘আমাদের দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা এখনো উন্নত পর্যায়ে যেতে পারেনি। অন্যান্য দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় আরো অত্যাধুনিক মেশিন ব্যবহার করা হয়। এসব মেশিনে চিকিৎসা চালানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। মেশিন কিছু আনা হয়, কিন্তু সেগুলো মেইনটেইন করা যায় না। কারণ দক্ষ জনবল নেই।

ক্লাবের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন বলেন, ‘আমরা পড়ালেখা ও গবেষণায়ও পিছিয়ে আছি। ভারতে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার। অন্যদিকে বাংলাদেশে মাত্র ৩১০। এ গবেষণাপত্রে আমরা সমস্যাগুলো স্পেসিফিক করার চেষ্টা করেছি।’

বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগী বাড়ার অন্যতম বড় কারণ পরিবেশ দূষণ। ক্লাবের সদস্য ডা. মাসুমুল হক বলেন, ‘দেশের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বাড়ার পেছনে মূল ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে রয়েছে ধূমপান, তামাক, স্থূলতা ইত্যাদি। পাশাপাশি পরিবেশ ও বায়ুদূষণও জড়িত । এছাড়া বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ ফুসফুসে আক্রান্ত হয় বায়ুদূষণের কারণে।’

BBS cable ad