Space for ads

এসএসসি পাস করেও তিনি ডাক্তার, হয়েছেন কোটিপতি

 প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন   |   অন্যান্য

এসএসসি পাস করেও তিনি ডাক্তার, হয়েছেন কোটিপতি
Space for ads
এসএসসি পাস করার পর ডিএমএফ কোর্স করেই ডাক্তার সেজে বসেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ফিরোজ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। নিয়মিত দেখছেন রোগী, দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্রও।
এদিকে চিকিৎসার নামে অনিয়ম এবং প্রতারণার মাধ্যমে তিনি কোটিপতি হয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফিরোজ আহমেদ তাড়াশ উপজেলার সরাপপুর বোয়ালিয়া গ্রামের হজরত আলীর ছেলে। তার বাবা ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদের কর্মসৃজন প্রকল্পের মাটিকাটা শ্রমিক। দিনমজুরি করেই চলতো তাদের সংসার। অভাব অনটনের মধ্য দিয়েই মাধাইনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে  এসএসসি পাস করেন ফিরোজ। এরপর বগুড়া সাইক মেডিকেল ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) কোর্স শেষ করেন।  

২০১২ সালে নুরুল ইসলাম নামে এক প্রবাসীর বোনকে বিয়ে করার পর তাদেরই “মা জেনারেল হাসপাতাল” নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পান ফিরোজ। সেখান থেকেই আস্তে আস্তে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচিত করেন তিনি। এক সময় নিজেই হাসপাতাল গড়ে তোলেন। এরপর প্রবাসী নুরুল ইসলামের বোনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে তালাক দেন।  

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, ১২ বছর আগেও যার কিছুই ছিল না, সেই ফিরোজ আহমেদ অনিয়ম ও প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় সাত শতক জমি কিনে তার ওপর ছয়তলা ভবন নির্মাণ করছেন। ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডসহ তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষ হয়েছে। জমিসহ ভবনের মূল্য প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া তার রয়েছে একটি মাইক্রোবাস, গ্রামের বাড়িতে কয়েক বিঘা জমিও কিনেছেন তিনি।  

এলাকাবাসী বলেন, ভুল চিকিৎসার অনেক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যে কোনো রোগী হাসপাতালে গেলেই একাধিক পরীক্ষার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরীক্ষা ছাড়াই তৈরি করে দেন প্যাথলজিক্যাল ভুয়া রিপোর্ট। কখনো কখনো চিকিৎসক না থাকলে হাসপাতালের নার্স ও আয়া দিয়ে সিজার করানোর অভিযোগও রয়েছে। ওই হাসপাতালে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হলেও রোগীর স্বজনদের টাকা দিয়ে মীমাংসা করে নিতেন।  

নিজে ডিএমএফ কোর্সধারী একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হওয়া সত্ত্বেও নামের আগে ডাক্তার লিখে প্রতারণা করে যাচ্ছেন ফিরোজ। হাটিকুমরুল গোলচত্বরকে ঘিরে তার বিশাল একটি মার্কেটিং টিম রয়েছে। এ টিমটি কমিশনের লোভে এ হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসে। এরপর রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।  

প্রবাসী নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা তিন ভাই বিদেশে থাকতাম। ফিরোজ আহমেদের সঙ্গে ২০১২ সালে বোনকে বিয়ে দিই। বিয়ের পর বোনের সুখের জন্য মা জেনারেল হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য তাকে দায়িত্ব দিই। দায়িত্ব পেয়েই অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট শুরু করেন ফিরোজ। হাসপাতালের টাকা-পয়সা লুট করে নিজেই একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন। তার থেকে ১৭ বছরের বড় এক চিকিৎসকের সঙ্গে পরকীয়া করে তাকে বিয়ে করেন। তারপরও বোনের সুখের জন্য আমরা বিষয়টি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু গত জুলাই মাসে আমার বোনকে ডেকে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলাও করা হয়েছে। আগস্টের ১ তারিখে বোনকে ডিভোর্স দিয়েছেন তিনি।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিরোজ আহমেদের বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, ১০ বছর আগেও ফিরোজদের মাটির ঘর ছিল। তার বাবা মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করতেন। অল্পদিনেই তারা বড়লোক হয়ে গেছেন।  

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে হেলথ কেয়ার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমি একজন ডিএমএফ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট। কখনোই ডাক্তার পরিচয়ে কোনো চিকিৎসা করি না।  

সাইনবোর্ডে ডাক্তার লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাইনবোর্ডে হয়তো ডাক্তার লেখা থাকতে পারে।

অবৈধ সম্পদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি কোনো সরকারি জব করি না যে দুর্নীতি করব। আমি যা করেছি, পরিশ্রম করে করেছি। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানে রোগী মারা গেছে কি যায় নাই, সেটা বলব না। রোগীর কোনো অভিভাবক কি আপনার কাছে অভিযোগ করেছে?

তিনি বলেন, আমাদের একটা পারিবারিক ঝামেলা চলছে। আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমিও মামলা করেছি। নুরুল ইসলামের বোনকে বিয়ে করেছিলাম। শরিয়ত মতো তাকে তালাক দিয়েছি। আবার শরিয়ত মতে আমি একজন ডাক্তারকে বিয়ে করেছি। এ কারণে পারসোনাল ইস্যু নিয়ে তারা এসব রটাচ্ছে।  

সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. রামপদ রায় বলেন, ডিএমএফ ডিগ্রিধারী কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারে না। তারা ব্যবস্থাপত্রও দিতে পারে না। হেলথ কেয়ার হাসপাতালের বিষয়টি দেখে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
BBS cable ad

অন্যান্য এর আরও খবর: