আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় সরকারি উদ্যোগের প্রতিফলন কোথায়
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় সরকারি উদ্যোগের প্রতিফলন কোথায় এমন প্রশ্ন তুলেছে ‘লড়াকু ২৪’ নামে একটি সংগঠন। এ সময় তারা ১৫ দফা দাবি তুলে ধরেছেন।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন তারা।
সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, আহতদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যে পরিমাণ উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হচ্ছে এর কোনো প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না।
এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৫টি দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশের সব আহত শিক্ষার্থী-জনতাকে চিহ্নিত করে অতি দ্রুত প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা বলতে কেবল তাদের শারীরিক ক্ষতকে বিবেচনা করলে চলবে না। বরং আহত প্রত্যেক ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক, মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আহত ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত স্বজনদের ব্যয়ভারও সরকারকেই বহন করতে হবে।
৩. আহত-নিহতের পরিবারের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন দরকার তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। যারা দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন কিংবা চিরস্থায়ীভাবে প্যারালাইজড হয়ে গেছেন- তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের মধ্যে যাদের জরুরিভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া জরুরি, আর কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে সরকারের উদ্যোগে বিদেশে নেয়া ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা, এটি তাদের জীবনমরণের প্রশ্ন।
আহতদের তথ্য সংগ্রহে প্রতিটি জেলাকেন্দ্রিক ‘জরুরি তথ্য সংগ্রহ কমিটি’ গঠন করতে হবে, যারা সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই কমিটির সদস্য তালিকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য বিশেষজ্ঞ, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষার্থী ও সচেতন জনতার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কমিটির সদস্যদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে সরকারি তহবিলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে।
প্রত্যেক আহত রোগীর পরিবারের সঙ্গে এক থেকে দুইজন শিক্ষার্থী বা নাগরিক স্বেচ্ছাসেবীদের যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যারা একজন আহত ব্যক্তির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা ও বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় পাশে থাকবেন।
করোনার সময়ের মতো আহতদের সার্বিক চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য ব্রিফ করতে হবে।
আহতদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় এবং গ্রামে বাড়ি তাদের দ্রুত ছাড়পত্র দিয়ে কিছুদিন পরপর চেকআপে আসতে না বলে বরং তাদের জন্য বিশেষায়িত আবাসিক চিকিৎসার তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
যেসব আহত ব্যক্তিরা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন- তা মওকুফ করতে হবে।
আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
দলীয় রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে চিকিৎসকদের পেশাগত নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে সেবা প্রদানে সচেষ্ট থাকতে হবে। চিকিৎসকদের পেশাগত নৈতিকতা নিশ্চিত করতে সরকারকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।
সরকারের তত্ত্বাবধানে সব সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগের স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমগুলোর সমন্বিত ও জবাবদিহিতামূলক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। সব ক্ষেত্রে অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
জরুরিভিত্তিতে প্রত্যেক জেলায় সরকারি হাসপাতালে আহতদের জন্য জরুরি তথ্য ও চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র খুলতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে আহতদের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত জীবন মরণের সমান। তাই সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে রোগীদের আনুষ্ঠানিক দেখতে যাওয়া এবং দেখে বেরিয়ে এসে গণমাধ্যমের সামনে আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় শেষ। আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণের নীতি এই মুহূর্তে বর্জন করতে হবে। আহত শিক্ষার্থী-জনতার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটিয়ে আর একদিনও কালক্ষেপণ না করে সরকারের তৎপরতা দৃশ্যমান করতে হবে।
জাতীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে, যারা কেবল মাত্র আহতদের চিকিৎসায় পরামর্শ দেবেন ও নজরদারি রাখবেন। প্রয়োজনে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন বিদেশি বা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকদের এই টাস্কফোর্স-এ নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। যেমন Doctors Without Borders-এর চিকিৎসকদের এই টাস্কফোর্স-এ অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবা যেতে পারে।